সূচি পত্র দেখুন
ডায়াবেটিস কী? কাকে বলে?Diabete:
ডায়াবেটিস-Diabete হচ্ছে একধরনের রোগের নাম।
রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক গুন বাড়িয়ে দেওয়াকে মুলত ডায়াবেটিস-Diabete বলে।
আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন রক্তে সুগারের পরিমাণ পরিচালনা (নিয়ন্ত্রণ) করে থাকে। এই হরমোনটি পাকস্থলীর (Stomach) পেছনে থাকা অগ্ন্যাশয়(Pancreas) বা প্যানক্রিয়াস নামের একটি গ্রন্থি(দেহের অভ্যন্তরের রস নিঃসরণকারী কোষ) থেকে তৈরি হয়।
মানুষের শরীরের খাবার যখন পরিপাক হয়ে রক্তে প্রবেশ করে, তখন এই ইনসুলিন রক্ত থেকে সুগার (গ্লুকোজকে) কোষের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে সেটাকে ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস (Diabete) হলে আমাদের দেহ সুগার তথা গ্লুকোসকে ভেঙ্গে এভাবে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না।
ডায়াবেটিসের কারণ ও প্রকারভেদ
মূলত দুটি কারণের ওপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিসকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস- type 1 diabetes
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস- type 2 diabetes
টাইপ ১ ডায়াবেটিস কি কাকে বলে type 1 diabetes:
আমাদের দেহে গ্লুকোজকে কোষের ভেতরে সরিয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন থাকে না। টাইপ ১ ডায়বেটিসে এমনটি হয়, কারণ এতে দেহের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) আপনার ইনসুলিন নির্মাণকারী কোষগুলোকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি? কাকে বলে? type 2 diabetes:
আপনার দেহে যে ইনসুলিন তৈরী হয়েছে তা সঠিকভাবে কাজ করছে না। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে এটি দেখা যায়, কারণ এতে দেহে প্রয়োজন অনুয়ায়ী ইনসুলিন তৈরি হয় না, অথবা প্রয়োজন অনুয়ায়ী ইনসুলিন তৈরি হলেও দেহের কোষগুলো সেই ইনসুলিনের প্রতি অনুভূতিপ্রবণ (সংবেদনশীল) থাকে না।
বর্তমানে পৃথিবীতে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের তুলনায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সচরাচর ডায়াবেটিস-diabetes বলতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
এই দুটি প্রকার ছাড়াও ডায়াবেটিসের আরও কিছু প্রকারভেদ আছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল Gestational Diabetes অর্থাৎ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। গর্ভবতী নারীদের অনেকের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় রক্তে সুগারের মাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে তা পরিচালনা( নিয়ন্ত্রণ) করার জন্য দেহে প্রয়োজন পরিমাণে ইনসুলিন তৈরী হয় না, তখন Gestational ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অনেকেই নিজের অজান্তে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগেন। প্রায়ই দেখা যায়, ভিন্ন ধরনের কোনো অসুখ বা সমস্যার জন্য যখন রক্ত কিংবা প্রস্রাব পরীক্ষা করানো হয় তখন এই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
কারও ডায়াবেটিস থাকলে সেটা তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা দরকার, কারণ সময়মতো ডায়াবেটিস ধরা না পড়লে অর্থাৎ চিকিৎসা না নিলে এটি দিন দিন শরীরকে আরও বেশি অসুস্থ করে ফেলে। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস হলে আপনার অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় নীরবে, কোন লক্ষণ ছাড়াই এমন কিছু রোগ শরীরে বাসা বাঁধে যা আপনি বুঝতে পারেন না। এজন্যই ডাক্তারে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চেকআপ করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
প্রি-ডায়াবেটিস কি কাকে বলে? (Pre-Diabetes)
অনেক মানুষের রক্তে সুগারের (গ্লুকোজ) মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকে, কিন্তু এতটাও বেশি না যে তাদের ডায়াবেটিস রোগী বলা যায়। এই অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস (Pre-Diabetes)।
প্রি-ডায়াবেটিস ঝুঁকি
আপনার রক্তে সুগারের(Pre-Diabetes) মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে আপনার ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়। তাই রক্তে সুগারের (Pre-Diabetes)মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে রাখতে এখনই ব্যবস্থা নিন।
সাধারণত একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি প্রি-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করতে পারেন। কারও কারও এর সাথে ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে, এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে হলে, এই লক্ষণ গুলো দেখা গেলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো হলোঃ
১.অতিরিক্ত পিপাসা লাগা২.স্বাভাবিকের চেয়ে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতের বেলা।৩.অতিরিক্ত ক্লান্ত বোধ করা৪.ওজন কমে যাওয়া ও শরীর শুকিয়ে যাওয়া৫.যৌনাঙ্গের আশেপাশে চুলকানো, কিংবা বারবার থ্রাশ (Thrush – ছত্রাক/ফাঙ্গাস দিয়ে ইনফেকশন) হওয়া৬.কাটা-ছেঁড়া বা অন্য কোন ক্ষত শুকাতে অনেক সময় লাগা.৭.দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
ডায়াবেটিস নিয়ে জীবনযাপন সমস্যাও সমাধান
ডায়াবেটিস ধরা পড়লে আপনাকে রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও সুগারের(গ্লুকোজ)পরিমাণ ঠিক আছে কি না যাচাই করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এসব নিয়মকানুন মেনে চললে আপনি সারাজীবন ওষুধের সাহায্য ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। টাইপ ১ ডায়াবেটিস থাকলে এগুলোর পাশাপাশি আজীবন নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়।
যেহেতু টাইপ ২ ডায়াবেটিস ডায়েট এবং ব্যায়ামের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না তাই এর চিকিৎসার জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত প্রথমে ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়, পরে প্রয়োজনে হলে ইনসুলিন ইনজেকশন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন রকম ঔষধ সেবন করলে বিপদ হতে পারে।