সূচি পত্র দেখুন
মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত | Mirsarai kiser jonno bikkhato
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত/ মিরসরাই কেন বিখ্যাত এইটি অনেকের মাঝে অনেক রকম মতামত রয়েছে। আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের জানাবো Mirsarai upazila kiser jonno bikkhato. এবং মিরসরাই নাম সারাদেশে কেন এতো জনপ্রিয়। চলুন জেনে নেই মিরসরাই কেন বিখ্যাত? কিসের জন্য বিখ্যাত??
মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত
কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম শহরের নামকরা এক স্যারের কাছে পড়তে গেছি। পরিচয় পর্বে নিজ জন্মস্থান জিজ্ঞেস করাতেই বললাম মিরসরাই। স্যার তখনই হেসে বলে উঠলো, মিরসরাইয়ের মানুষজনের একটা জিনিস দীর্ঘদিন খেয়াল করছি, দেশ বা বিদেশে যেখানেই দেখা হয় বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলে তারা চট্টগ্রাম জেলার হয়েও বলেনা চট্টগ্রাম, তারা জোর গলায় বলে মিরসরাই। কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম, আসলেই তো স্যারের কথাই ঠিক। একটি উপজেলা হয়েও মিরসরাইকে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে চেনাতে কষ্ট হয় না, তাই আমরা যে মিরসরাইয়ের; এটি পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।
Mirsarai kiser jonno bikkhato
মিরসরাইকে আলাদাভাবে চেনার বেশ কয়েকটি কারণ আছে বৈকি। ৪৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়োতন শুনেই তো অনেকেই অবাক হয়, আয়তনে যে এই উপজেলা প্রায় একটি জেলার সমান! চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার এই উপজেলা, পার্বত্যচট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম জেলার সমগ্র অংশ, কিংবা কক্সবাজার যেতে হলে অবশ্যই এই উপজেলার সড়ক কিংবা রেলপথ কিংবা নৌপথ অতিক্রম করতেই হবে।
মিরসরাই ভূপ্রকৃতিগত দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ এবং আলাদা। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের আর পূর্বে পাহাড়ের বিশালতা, মাঝে সমতল ভূমি, এ নিয়ে আমাদের মিরসরাই। প্রকৃতি আমাদের দু’হাত ভরে সৌন্দর্য আর সম্পদ উপহার দিয়েছে।
মহামায়া লেক বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক এবং জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেশের অন্যতম বৃহত্তম এবং অনিন্দ্যসুন্দর ঝর্ণার একটি। নাপিত্তাছড়া আর রুপসী ঝর্ণা ভ্রমণপিপাসু এবং এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য খুবই প্রিয়। বাউয়াছড়া তথা নীলাম্বর লেকের সৌন্দর্য কম কিসে? পূর্বের বিশাল পাহাড়ে আছে আবিষ্কৃত এবং অনাবিষ্কৃত অসংখ্য ঝর্ণা, আছে নানা রকমের বন্য জীবজন্তু আর গাছপালা। বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে পাহাড়ি দৃশ্য আর আঁকাবাঁকা পথের সৌন্দর্য যে কতটা ; যারা এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন তারাই জানেন।
মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত
মুহুরি প্রজেক্ট কেন্দ্রিক বিশাল বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ প্রকল্প গড়ে উঠেছে অনেক আগে থেকে। প্রতিদিন এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা প্রজাতির মাছ নেয়া হয়। বারৈয়ারহাট মাছ বাজার দেশের মাছ ব্যবসায়ীদের জন্য সুপরিচিত স্থান, প্রতিদিন সকালে এখানে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা হয়। উপকূলের রুপালী ইলিশের প্রাচুর্য আছে, নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায় উপকূলে। বিটিভির সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনে আমরা অনেকেই দেখেছি, হাইতকান্দি ইছাখালী পয়েন্ট ইলিশের মূল প্রজননবান্ধব স্থানের একটি। যে শীতলপাটি ইউনোস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়েছে কিছুদিন আগে, সেই শীতলপাটির অসংখ্য কারিগর আছে মিরসরাইয়ের গ্রামে গ্রামে। শীতলপাটির জন্যও কম বিখ্যাত নয় এ অঞ্চল। পাহাড়ি বাঁশ বেতের যোগানেও বেশ এগিয়ে এ অঞ্চল। মিঠাছড়ার গরুর বাজার কুরবানির সময় বৃহত্তর চট্টগ্রামের অনেক মানুষের আস্থার নাম।
ইকোনমিক জোনের কাজ শেষ হলে মিরসরাইতে কর্মসংস্থান হবে ২০ লাখ লোকের, দেশি বিদেশি বড় বড় বিনোয়োগকারীদের চোখ এখানে। এই ইকোনমিক জোন দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। আর ভ্রমণ পিপাসুদের আর এডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য মিরসরাই তো এখন খুবই পছন্দের স্থান। এখানকার মানুষের অতিথিপরায়ণতার কথা সবাই জানে। মিরসরাইয়ের আলাদা ভাষা, আলাদা সংস্কৃতি, আলাদা রীতিনীতি আছে।
মিরসরাইয়ান এই পরিচয়টা সত্যিই গর্বের।
(পুনশ্চ-মিরসরাইকে এখন ব্র্যান্ডিং করা খুবই প্রয়োজন। কথাটা বলছি এজন্যই, মিরসরাইয়ের যে ঝর্ণাগুলো কিংবা পর্যটন স্পটগুলো আছে তা এখনো অনেকেরই অজানা। পর্যটনবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মিরসরাইয়ের সবকিছুই আছে। পাহাড় আছে, সমুদ্র আছে, ঝর্ণা আছে, এখন দরকার কার্যকর পরিকল্পনা। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রতিটি এলাকার আলাদা বৈশিষ্ট্য সবগুলো আমাদের তুলে ধরতে হবে।
আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেটি আমার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, সেটি হলো- আমাদের প্রাকৃতিক প্রাচুর্যকে রক্ষা করার ব্যাপারটি, পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারটি। ইকোনোমিক জোন হচ্ছে আমরা ভীষণ খুশি, কিন্তু সেটা বর্তমানে যে ইছাখালীর চর আছে সেখানে নির্দিষ্ট স্থানেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে। আমাদের উপকূলের বনবেষ্টনী, ম্যানগ্রোভ বন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন বিনষ্ট না হয়, ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র যাতে নষ্ট না হয়। মিরসরাইয়ের ইকোট্যুরিজমের বিশাল সম্ভাবনা আছে, আমাদের পাহাড়গুলোতে কি মূল্যবান সম্পদ আছে তা আমরা সাধারণভাবে অনুভব করতে পারব না।