শবে বরাতের ফজিলত আল কাউসার

 শবে বরাতের ফজিলত আল কাউসার

আলকাউসারের শাবান ১৪২৬ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৫ ঈ.) সংখ্যায় ‘বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবে বরাত’ শিরোনামে, শাবান ১৪২৭ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৬ ঈ.) সংখ্যায় ‘উলামায়ে সালাফের উক্তির আলোকে শাবান শবে বরাত’ শিরোনামে এবং রজব ১৪২৮ হি. (আগষ্ট ’০৭ ঈ.) সংখ্যায় ‘অজ্ঞতা ও রসম-রেওয়াজের কবলে শাবান-শবে বরাত : নববী নিদের্শনাই মুক্তির উপায়’ শিরোনামে শাবান ও শবে বরাত সম্পর্কে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় কথা পাঠকের সামনে এসে গেছে। ওয়াল হামদু লিল্লাহি তাআলা আলা যালিকা হামদান কাছীরা।

শবে বরাতের ফজিলত আল কাউসার


এ সংখ্যায় শুধু কিছু ভুল ধারণা চিহ্নিত করে দিতে চাই। কেননা এগুলো সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন এসে থাকে।

শবে বরাতের দলিল

প্রশ্ন ১ : আমি এক কিতাবে পড়েছি যে, শবে বরাত বিষয়ক সকল হাদীস ‘মওযু’। ইবনে দিহয়ার উদ্ধৃতিতে কথাটা ওই কিতাবে লেখা হয়েছে।

উত্তর : এটা একটা ভুল কথা। ইবনে দিহয়া কখনো এমন কথা বলতে পারেন না। যিনি তার উদ্ধৃতিতে এ কথা লিখেছেন তিনি ভুল লিখেছেন। ইবনে দিহয়া শুধু এটুকু বলেছেন যে, শবে বরাতে বিশেষ নিয়মের নামায এবং সে নামাযের বিশেষ ফযীলতের যে কথাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তা মওযু। তাঁর মূল আরবী বক্তব্য তুলে দিচ্ছি :

أحاديث صلاة البراءة موضوعة

‘শবে বরাতের বিশেষ নামায সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মওজু।’

(তাযকিরাতুল মওজুআত, মুহাম্মাদ তাহের পাটনী পৃ. ৪৫)

আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’

আল্লামা শাওকানীও ‘আল ফাওয়াইদুল মাজমূআ’ পৃ. ৫১)তে এই ভুল ধারণা সংশোধন করেছেন।

প্রশ্ন ২ : একজন আলিমের কাছে শুনেছি যে, শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়া ‘মাসনূন’ নয়। আর আজকাল যেভাবে এ রাতে কবরস্থানে মেলা বসানো হয় এবং মহিলারাও বেপর্দা হয়ে সেখানে গিয়ে ভিড় করে, তা তো একেবারেই নাজায়েয।

প্রশ্ন এই যে, যতটুকু নাজায়েয তা তো অবশ্যই নাজায়েয, কিন্তু যদি মহিলারা বেপর্দা না হয় এবং কোনো গুনাহর কাজও সেখানে না হয় তবুও কি এ রাতে কবর যিয়ারত মাসনূন বলা যাবে না? হাকীমুল উম্মত ‘ইসলাহুর রুছূম’ কিতাবে একে ‘মাসনূন’ লিখেছেন।

উত্তর : মহিলাদের জন্য যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে যাওয়া এমনিতেও নিষেধ। এরপর যদি পর্দাহীনতা ও অন্যান্য আপত্তিকর বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তা আরো কঠিন হয়ে যায়। আর কবরস্থান যদি নিকটবর্তী হয় এবং মাযার না হয় আর সেখানে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কাজকর্ম না হয় তাহলে পুরুষের জন্য এ রাতে সেখানে গিয়ে যিয়ারত করার বিধান কী? হাকীমুল উম্মত রাহ. প্রথমে একে মাসনূন লিখেছিলেন। পরে আরো চিন্তা-ভাবনা ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মত বিনিময় করার পর ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন এবং লেখেন যে, আমি কবরস্থানে যাওয়া থেকে বারণ করাকেই অধিক সতর্কতার বিষয় মনে করি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৮) শরীয়তের নীতিমালার আলোকে হযরত থানভী রাহ-এর দ্বিতীয় মতই অগ্রগণ্য।

প্রশ্ন ৩ : সুনানে ইবনে মাজাহ-তে (হাদীস নং : ১৩৮৮) পনেরো শা‘বান রাত সম্পর্কে এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে :

قوموا ليلها وصوموا نهارها

এই রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে (অর্থাৎ পনেরো শা’বান) রোযা রাখ।

এই হাদীসটি থানভী রাহ. ‘খুতবাতুল আহকাম’-এ উল্লেখ করেছেন এবং ‘ইসলাহুর রুসূম’-এ পনেরো শাবান-এর রোযাকে মাসনূন বলেছেন। কিন্তু এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে মওযু বলেছেন। এরপর হযরত মাওলানা মুহাম্মদ তকী উছমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘ইসলাহী খুতবাত’-এ দেখলাম যে, সেখানে এই হাদীসটিকে ‘জয়ীফ’ লেখা হয়েছে এবং এই রোযাকে ‘সুন্নত’ মনে করা ভুল বলা হয়েছে। প্রকৃত বিষয়টি বুঝে আসছে না। আশা করি সাহায্য করবেন।

উত্তর : ইবনে মাজাহর উপরোক্ত হাদীসটি ‘মওজু’ তো কখনোই নয়। তবে সনদের দিক থেকে ‘জয়ীফ’। যেহেতু ফাযাইলের ক্ষেত্রে ‘জয়ীফ’ গ্রহণযোগ্য তাই আলিমগণ শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে এ হাদীস বয়ান করে থাকেন।

Leave a Comment