ফাতেমা ও আলি রাঃ এর অভাবের ঘরে এক অদ্ভুত ফকির এসে খাবার চাইলাে তারপর ঘটলাে বিস্ময়কর ঘটনা |

সুপ্রিয় দর্শক আজকের এই লিখার মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব, আলী এবং ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর অভাবের ঘরে একজন ফকির এসে খাবার চাইল, অতঃপর ঘটল বিস্ময়কর ঘটনা।


 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ

একবার হাসান এবং হােসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু অসুস্থ হলেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু এবং হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন মানদ করলেন যে, তারা সুস্থ হলে শুকরিয়া হিসেবে ৩টি করে রোজা রাখবেন
কিন্তু সেহরি ও ইফতার করার কিছুই-ছিল না।

অনাহারে রােজা রাখা শুরু করলেন। সকালে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সামাউন নামের এক ইহুদির কাছে গিয়ে বললেন ও তােমার কাছে যদি পশমদ্বারা সুতা তৈরি করার কোন কাজ থাকে তবে দাও।

মােহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে কাজ করবেন। ইহুদি সামাউন ৩ সা জবের বিনিময় এক বস্তা প্রশ্ন সুতা তৈরি করার জন্য দিলেন।

অতঃপর হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা সুতা তৈরির কাজ শুরু
করলেন। তিন ভাগের এক ভাগ কাজ শেষ করলেন, পারিশ্রমিক হিসেবে এক-সা জব
নিয়ে আসলেন।

হয়রত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ হাতে উক্ত জব পিসে পাঁচটি রুটি তৈরি করলেন।
স্বামী স্ত্রীর জন্য দুইটি রুটি, দুই সন্তানের জন্য দুইটি রুটি আর তাদের দাস,
এর জন্য একটি রুটি রােজা অবস্থায় সারাদিনে রােজগারের জন্য পরিশ্রমের পর হয়রত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহ হুজুর সাঃ এর সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন।

 অতঃপর ঘরে এসে খানার দস্তরখানায় এসে বসলেন।
হয়রত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু একটুকরাে রুটি মুখে নিয়েছিলেন।এমন সময় একজন ফকির ঘরের দরজায়এসে আওয়াজ দিলঃ

হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গ আমি এক ফকির মিসকিন, আমাকে খানা দাও আল্লাহ পাকরাবুল আলামিন
তােমাদের জান্নাতের দস্তরখানায় খাওয়াবেন।

 হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হাত নামিয়ে নিলেন এবং হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে পরামর্শ করলেন। হযরত ফাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন অবশ্যই দিয়ে দিন। তারপর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সমস্ত রুটি ফকির মিসকিন কে দিয়ে দিলেন।ফলে ঘরের সকলে অনাহারে থাকলেন।

অতঃপর দ্বিতীয় দিনের রােজা শুরু হল। আবার হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এক-তুতীয়াংশ পশমের সুতা তৈরি করে, এক সাদ জব পারিশ্রমিক স্বরূপ পেলেন, এবং জব পিসে রুটি তৈরি করলেন।

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে মাগরিবের সাললাত আদায় করে ঘরে আসলেন, এবং সকলে মিলে খাওয়ার দস্তরখানায় আসলেন। 

এমন সময় এক ইয়াতিম দরজায় এসে ভিক্ষা চাইলাে। এবং চরম দারিদ্য ও অসহায়ত্বর কথা জানালাে। 
ফলে তারা ওই দিনের সমস্তরুটি ও ওই ইয়াতিম এর হাতে তুলে দিলেন। এবং নিজেরা পানি পান করে তৃতীয় দিনের রােজা শুরু করলেন।

সকালে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু অবশিষ্ট পশম দ্বারা সুতা তৈরি করলেন। এবং পারিশ্রমিক হিসেবে এক সাদ  জব পেলেন এবং সেগুলাে কিসের রুটি তৈরি করলেন ।  
মাগরিবের নমাজের পর যখন সকলে খেতে বসলেন তখন এক যুদ্ধবন্ধী দরজায় এসে

 আওয়াজ দিল, এবং দারুণ অভাব ও কষ্টের কথা বলে সাহায্য চাইল 

এবারও তাঁরা তাকে সেদিনের সমস্ত রুটি দিয়ে
দিলেন এবং সেদিনের জন্য তাঁরা অনাহারেই থেকে গেলেন।

 চতুর্থ দিন সকালে রোজা ছিল না কিন্তু খাও আরও কিছু ছিলনা। হযরত আলী রাদিয়ালাহু তাআলা আনহু পুত্র হাসান ও হুসাইন কে সঙ্গে করে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে হাযির হলেন।

 ক্ষুধা ও দুর্বলতার কারণে চলাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ

তােমার ক্ষুধা ও কষ্ট দেখে আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে চলাে ফাতেমার কাছে যাই। 
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ঘরে আসলেন  তখন তিনি নামাজ পড়ছিলেন, তিনি দেখতে পেলেন ক্ষুধায় তার চোখ ভিতরে দিকে ডুকে  গিয়েছে এবং খুবই দুরবস্থা তার।

তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতালার কাছে ফরিয়াদ জানালেন। তখন জিব্রাইল আলাই ওয়াসাল্লাম কোরআনের একটি আয়াত সহ
আসলেন। অর্থাৎ তারা ইয়াতীম মিসকিনে বন্দিকে আহার দান করে, খাবারের প্রতি নিজেদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও।

 হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহ তাআলার সন্তু্টি ও প্রশংসা লাভের কারণে , হযরত আলী ও তার পরিবারবর্গ কে মােবারকবাদ জানালেন।  

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা হল দানশীল লােক আল্লাহর নিকট ভর্তি জান্নাতের নিকটবর্তী,মানুষ ও সমাজের নিকটবর্তী। একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দান করলে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের প্রশংসা করেন।

 হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দানে আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হয়ে ওহী নাযিল করেছেন।  তাদের দান কতটা উচ্চ পর্যায়ের ছিল । সুবাহানাল্লাহ!

Leave a Comment